প্রযুক্তির খেলা ব্লগস্পট থেকে তার নিজস্ব ডোমেইনে
তাই ভিজিট করুন আমার সাইটে www.projuktirkhela.com

to stay updated on our progress.

বুধবার, অক্টোবর ১৭

প্রতিবন্ধীর সাহায্যকারি যন্ত্রবন্ধু

প্রতিবন্ধীর যন্ত্রবন্ধুপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অনেক শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীই এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আমাদের দেশে এখনো অপ্রচলিত এসব প্রযুক্তি নিয়ে আজ থেকে ঢাকায় একটি বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করেছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি)। ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজায় দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। জানাচ্ছেন হাসান শাহরিয়ার হৃদয়

কিছুদিন আগেও শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব ছিল সামাজিক অভিশাপের মতো। সমাজ থেকে যেন একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতেন প্রতিবন্ধীরা। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে এ অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। তাঁরাও আজ সমাজের প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠছেন। দেশের অনেক প্রতিবন্ধী ও তাঁদের পরিজন বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বলা যায় সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গোপাল চন্দ্র সাহা আর মহিউদ্দিনকে। দৃষ্টি-সহায়ক যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে তাঁরা এখন দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর। নিজেদের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের। সিডিডির সমন্বয়ক ব্রজ গোপাল সাহা বলেন, 'দেরিতে হলেও আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের সহযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থী হোক বা চাকরিজীবী, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আর দশজনের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে তাঁরাও অংশ নিচ্ছেন।' ভারতের কারিশমা এন্টারপ্রাইজের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজে আসবে এমন কিছু প্রযুক্তি এ প্রদর্শনীতে দেখানো হবে বলে জানালেন তিনি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য

টেক্সট রিডিং মেশিন : যন্ত্রটি কাগজে ছাপা যেকোনো লেখা (ইংরেজি, হিন্দিসহ অনেক ভাষায়। বাংলা ভাষার জন্য এর উন্নয়ন কাজ চলছে) পড়ে শোনাতে সক্ষম। এর ক্যামেরার নিচে বই কিংবা কাগজ ধরলেই এটি পড়ে শোনাতে শুরু করবে। এতে ব্যবহৃত মোশন সেন্সর প্রযুক্তি মিনিটে ২০ পৃষ্ঠা স্ক্যান করতে পারে। এতে স্থায়ীভাবে ২২২টি জনপ্রিয় সাহিত্যের বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মোবাইল ফোন টেক্সট রিডিং সফটওয়্যার : কোনো লেখার ছবি মোবাইল ক্যামেরায় তুললে তা পড়ে শোনাতে পারে এ সফটওয়্যার। এতে শব্দ, শব্দের মাত্রা ও পড়ার গতি প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। বিভিন্ন রংও শনাক্ত করতে পারে এ সফটওয়্যার।
কম্পিউটার সাপোর্টেড রিডার : কম্পিউটারে এই বিশেষ ধরনের বহনযোগ্য ক্যামেরা যুক্ত করে রিডিং সিস্টেমে পরিণত করা যায়। চালুর মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই ডিভাইসটি আপনাকে পৃষ্ঠার লেখাগুলো (ইংরেজি, হিন্দিসহ অনেক ভাষা এখন কাজ করছে। বাংলা ভাষার জন্য এর উন্নয়ন কাজ চলছে) পড়ে শোনাতে শুরু করবে। এটি প্রতি মিনিটে ২০টি পৃষ্ঠা স্ক্যান করতে পারে। এ ছাড়া হ্রস্বদৃষ্টি বা দীর্ঘদৃষ্টিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুবিধার জন্য এটি স্ক্যান করা লেখাকে নতুনভাবে সাজিয়ে নেয়। লেখার আকার আর ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে এবং প্রতিটি শব্দকে হাইলাইট করে যেকোনো ধরনের লেখাকে পড়ার উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর। লেখাকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিংবা নোটপ্যাডে রূপান্তর করে প্রাতিষ্ঠানিক কাজেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডেইজি টকিং বুক প্লেয়ার : স্বল্প ওজনের পকেট সাইজের ডেইজি প্লেয়ার কাম রেকর্ডার ই-বুক পড়ে শোনানোর পাশাপাশি এমপিথ্রি প্লেয়ার, ইন্টারনেট রেডিও ও পডকাস্ট রিসিভার হিসেবেও কাজ করে। নেভিগেশনের মাধ্যমে সাধারণ ই-বুকের প্রায় সব সুবিধাই এতে যুক্ত করা আছে।
টকিং টাইপিং টিচার : অন্ধদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ৪১টি সহজ অনুশীলনের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সাধারণ মানুষের মতোই কিবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন। একটি বন্ধুসুলভ মানবকণ্ঠ সব সময় এতে নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
জব অ্যাক্সেস উইথ স্পিচ (JAWS) : এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাধারণ যেকোনো কম্পিউটারকেই কথা বলা কম্পিউটারে পরিণত করা যাবে! সব ধরনের নির্দেশনা দিয়ে এটি কম্পিউটারকে অন্ধদের ব্যবহারোপযোগী করে তুলবে।

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য

এফএম ওয়্যারলেস লিসেনিং ডিভাইস : শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য এটি খুবই কাজের জিনিস। এটি অপ্রয়োজনীয় শব্দ দূর করে শুধু কাঙ্ক্ষিত শব্দের ওপর জোর দেয়। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশেও এটি ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ ও প্রতিধ্বনি দূর করে স্পষ্ট শব্দ শুনতে সাহায্য করে। বাড়তি একটি ডিভাইস যুক্ত করে একে টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সঙ্গেও যুক্ত করা সম্ভব।
লিসেনার অ্যামপ্লিফিকেশন ডিভাইস : একটি মাইক্রোফোন ও এক জোড়া হেডফোন সংবলিত যন্ত্রটি 'ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ' দূর করার পাশাপাশি 'জুম' ও 'ওয়াইড' অপশন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোনো শব্দের ওপর জোর দিতে পারে। এতে একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি রয়েছে, যা প্রতিবার চার্জে ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়।
শিশুদের জন্য বাক ও ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার : শিশুদের জন্য তৈরি এ বিশেষ প্যাকেজে সাতটি ভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম রয়েছে। প্রোগ্রামগুলো বিভিন্ন মজাদার গেইম ও কার্যক্রমে বাচনভঙ্গি শিক্ষা দেবে। কণ্ঠের তীক্ষ্নতা, তীব্রতা, সুর ইত্যাদি ব্যবহার করে শিশুরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুশীলন সম্পন্ন করবে এতে।
সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ : ব্যতিক্রমধর্মী সফটওয়্যারটি প্রতিটি অক্ষর টাইপ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে 'সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ' বা 'চিহ্ন ভাষা'য় পরিণত করবে। এর ফলে দ্রুত এ ভাষাটি আয়ত্ত করা যাবে।

আরো কিছু প্রযুক্তি

বিশেষ ধরনের কিবোর্ড : পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ধরনের কিবোর্ড রয়েছে। এর সাহায্য নিয়ে টাইপ করা কিংবা কমান্ড দেওয়ার মতো কাজ করা যাবে। যেমন এক হাতে টাইপ করার জন্য রয়েছে 'ওয়ান হ্যান্ড কিবোর্ড'। নড়াচড়ায় অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে পরিপুর্ন 'অন-স্ক্রিন ভার্চুয়াল কিবোর্ড'। আরো রয়েছে নিজের মতো করে প্রোগ্রাম করার 'অল্টারনেট কিবোর্ড'। (টাচ সেনসিটিভ) হওয়ায় সহজেই এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব। মস্তিষ্কের মোটর ফাংশনে আক্রান্তদের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী। আর 'ফুট পেডাল কিবোর্ড'-এর মাধ্যমে পা দিয়েই কিবোর্ডের কাজ করা যাবে।
টাইপিং টিউটরিয়াল : হাতের পাঁচ আঙুলের সাহায্যে দ্রুত টাইপ করার জন্য রয়েছে 'ফাইভ ফিঙ্গার টাইপিস্ট' টিউটরিয়াল। এ ছাড়া হাত নড়াচড়া করতে অক্ষম বা প্যারালাইজড ব্যক্তিদের জন্য শুধু স্পর্শ করার মাধ্যমে বিশেষ ধরনের কিবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করার সফটওয়্যার রয়েছে। ২০টি ভিন্ন বিভাগ থেকে প্রতিবন্ধীরা যেকোনোটি কাজে লাগাতে পারেন।
বিশেষ ধরনের মাউস : মাউস নাড়াতে পারেন, কিন্তু ক্লিক করতে পারেন না, এমন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে, যা ব্যবহার করে সিঙ্গেল ক্লিক, ডাবল ক্লিক সবই করা যাবে। হাত কিংবা আঙুল নাড়াতে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও রয়েছে মাথা নাড়িয়ে কিংবা অঙ্গভঙ্গি করে কম্পিউটার চালানোর সফটওয়্যার। সাধারণ ওয়েবক্যামের সাহায্যেই এটি ব্যবহার করা যাবে।
ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়্যার : শুধু কণ্ঠ দিয়ে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস, মাস্কুলার ডিস্ট্রফি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি কাজে আসবে।

মানসিক প্রতিবন্ধীর জন্য

ডিজলেক্সয়ি ও মানসিক স্থবিরতার জন্য সফটওয়্যার : বলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'তারে জামিন পার'-এর কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? সেই শিশুটির মতো 'ডিজলেক্সয়ি' রোগে আক্রান্ত শিশুদের লেখাপড়া শেখার জন্য বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে। এ ছাড়া মানসিকভাবে ধীরগতির শিশুদের বিশেষ যত্নসহকারে শিক্ষাদানের জন্য রয়েছে সফটওয়্যার।
অটিস্টিক শিশুদের জন্য সফটওয়্যার : সুস্থ পরিচর্যার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুও সাধারণ শিশুর মতো হয়ে উঠতে পারে। অটিস্টিক শিশুদের অঙ্ক, ভাষা, কম্পিউটার ইত্যাদি শেখানোর জন্য আছে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে তারা পড়া তৈরির পাশাপাশি নিজস্ব সময়সূচি তৈরি করতে পারবে। রয়েছে টকিং কমিউনিকেশন বোর্ড, যা অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ডিজলেক্সয়ি, দৃষ্টি, শ্রবণ, আবেগসহ ছোটখাটো শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার মাত্রা পরিমাপ করার জন্যও রয়েছে ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট সফটওয়্যার।

সংগ্রহ ঃ ইন্টারনেট

৩টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
জনপ্রিয় পোস্ট সমূহ

আমার সম্পর্কে

Search (Don't Edit)

ব্লগ লাইব্রেরী

বিভাগ

ইমেল দিয়ে পোস্ট এর আপডেট পেতে

Subscribe করুন

সম্প্রতিক মত্নব্য

Review projuktirkhela.blogspot.com on alexa.com